Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কলেজের ইতিহাস

সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের গৌরবময় ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির এক অমিত সাহস। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। তিনি শেখ মুজিব বাঙালির অহংকার; আমাদের প্রিয় নেতা। তাঁর জন্মধন্য পুন্যভূমি গোপালগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিধন্য ‘সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ’। এর রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস।

১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে পূর্ব—পাকিস্তানে ‘জিন্নাহ ফান্ড’ নামে সরকার একটা ফান্ড খোলে। যে যা পারে তাই দান করবে এই হলো হুকুম। কিন্তু কিছু সংখ্যক অতি উৎসাহী অফিসার প্রমোশনের লোভে সরকারকে খুশি করার জন্য জোর—জুলুম করে টাকা তুলতে শুরু করে। গোপালগঞ্জ মহাকুমায় এটা ভীষণ রূপ ধারণ করে। চারিদিকে অত্যাচার শুরু হয়ে গেছে। চৌকিদার, দফাদার নেমে পড়েছে। কারও গরু, কারও বদনা, থালা কেড়ে আনা হচ্ছে। এ এক ত্রাসের রাজত্ব।

পরিস্থিতি যখন এমন অসহনীয় পর্যায়ে তখন বঙ্গবন্ধু খুলনা থেকে স্টিমারে গোপালগঞ্জ এলেন। হরিদাসপুর ঘাট থেকে নৌকায় করে শহরের বাসায় যেতে যেতে তিনি নৌকার মাঝির কাছে সব ঘটনা জানতে পারেন। গোপালগঞ্জ নেমে শহরের বাসায় পেঁৗছানোর সাথে সাথে অনেক লোক জমা হয়ে গেল। সকলের মুখে ঐ একই কথা। পরেরদিন শেখ মুজিব স্থানীয় সকল জনতাকে নিয়ে এক সভা করলেন। বললেন “ আমাদের বাধা দিতে হবে। এটা সরকারের ট্যাক্স না। লোকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য, কিন্তু কোন্ আইনে চাঁদা জোর করে তুলতে পারে ?” কিন্তু জানা গেলো ইতোমধ্যে তিন লক্ষ টাকা তোলা হয়ে গেছে। মহাকুমা হাকিম ও মুসলিম লীগ এডহক কমিটি ঠিক করেছিল,যে টাকা অভ্যর্থনায় খরচ হবে তা বাদ দিয়ে বাকী সমস্ত টাকা খাজা সাহেবকে তোড়ায় করে দেওয়া হবে জিন্নাহ ফান্ডের জন্য। বঙ্গবন্ধু সবার সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত দিলেন, “এ টাকা নিতে দেওয়া হবে না। তাঁর অভ্যর্থনায় যা ব্যয় হয়, তা বাদে বাকি টাকা মসজিদ আর গোপালগঞ্জে একটা কলেজ করার জন্য রেখে দিতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে, আমরা বাধা দেব। দরকার হয় সভায় গোলমাল হবে। এ খবর চলে গেল সমস্ত মহাকুমায়। টাকা তোলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল।”

খাজা নাজিমুদ্দিন আসার আগের দিন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান জেলা ম্যাজিট্রেট মি. গোলাম কবির গোপালগঞ্জে এসেই শেখ মুজিবকে খবর দিলেন। কলকাতা থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে চিনতেন এবং তুমি বলে ডাকতেন। বঙ্গবন্ধু গোলাম কবিরের সাথে দেখা করলেন এবং জনগণের দাবিগুলি পেশ করলেন। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হলো যে, জেলা ম্যাজিট্রেট গভর্নর জেনারেলের সাথে আলোচনা করে বঙ্গবন্ধুকে জানাবেন যে, “তিনি হুকুম দিবেন এই অত্যাচার করে টাকা তোলার ব্যাপারে তদন্ত করবেন এবং দোষীকে শাস্তি দিবেন। দ্বিতীয়ত টাকা তাঁকেই দেওয়া হবে,আমরা কোনো দাবি করব না;শুধু তিনি টাকাটা কলেজ করতে দিয়ে দেবেন। তিনিই আমাদের কলেজ করে দিবেন। যদি সম্ভব হয় কিছু টাকা মসজিদের জন্য রাখা হবে (বর্তমান কোর্ট মসজিদ)। 
পরেরদিন সকাল এগারোটায় খাজা সাহেব গোপালগঞ্জে এলেন। বঙ্গবন্ধুকে ডেকে নিয়ে গেলেন তাঁর বজরায়। বঙ্গবন্ধুর দাবি ছিল ন্যায়সঙ্গত, গোপালগঞ্জ শহরে কলেজ নাই। একটা কলেজ হওয়া দরকার,খাজা নাজিমুদ্দিন এ কথা স্বীকার করলেন। বিরাট জনসভা হলো। সকলেই গভর্নর জেনারেলকে অভ্যর্থনা জানালেন। তবে টাকা তিনি নেন নাই, কলেজ করার জন্য দিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যে মিশনারী স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। সেই স্কুলের জায়গায়ই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ‘জিন্নাহ ফান্ড’ এর নামে টাকা তোলা হয়েছিল বলে কলেজটির নামকরণ করা হয় ‘কায়েদে আজম মেমোরিয়াল কলেজ’। (অনুলিখন:বঙ্গবন্ধু’র অসমাপ্ত আত্মজীবনী। পৃষ্ঠা: ১০৫—১০৭)

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে এর নামকরণ হয় ‘বঙ্গবন্ধু মহাবিদ্যালয়’। ১৯৭৪ সালে এ কলেজটিকে জাতীয়করণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এ কলেজে ১০টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করেন। ১৯৯৭—২০০০ ইং সময়ে কলেজের অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। নির্মিত হয় অডিটোরিয়াম, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, লাইব্রেরি ও ছাত্র—ছাত্রী হোস্টেল। গোপালগঞ্জ—২ আসনের মাননীয় সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম এম.পি কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয়ে সর্বদা প্রত্যক্ষ নজর রাখেন।

বর্তমানে কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির কার্যক্রম সম্পূর্ণ পৃথক ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯.০০ টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কলেজে একটি বাস প্রদান করেছেন। ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন ও একটি ছাত্রী হোস্টেল বর্তমানে নির্মাণাধীন। কলেজে বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় CEDP প্রজেক্টের আওতায় শিক্ষার মান উন্নয়নে নানামুখী কর্মপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আধুনিক কলেজ গেট নির্মাণ, পদসৃষ্টি, গাড়ি ক্রয়, নতুন নতুন অনার্স বিষয় খোলা, ছাত্র—ছাত্রীদের জন্য আরো ৩টি কলেজ বাস আনয়নসহ নানাবিধ বিষয়। বর্তমানে মোট ১৩টি বিষয়ে অনার্সসহ মাস্টার্স কোর্স পাঠদান করা হয়। চালু আছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নানামুখী শিক্ষা কার্যক্রম। রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি কলেজ ইউনিট অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে জাতীয় পর্যায়ে তাদের অবদান রেখে চলেছে।
এইচএসসিতে পাশের হার খুবই আশাব্যঞ্জক। একাদশ—দ্বাদশ শ্রেণির জন্য রয়েছে পৃথক ভবন এবং সুন্দর মনিটরিং ব্যবস্থা। প্রতি বছর মেডিকেল, বুয়েট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কলেজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র—ছাত্রী ভর্তি হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এ কলেজে অনার্স এবং মাস্টার্সের রেজাল্ট অত্যন্ত ভালো। গত ২০২২ সালে চ্যান্সেলর পদক পেয়েছে এ কলেজেরই ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন ছাত্রী। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক—কর্মকর্তাদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আন্তরিকতায় লেখাপড়ার মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এ জেলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত ভিজিল্যান্স টিম অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলেছে। কলেজ ক্যাম্পাসটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রিত। সাহিত্য—সংস্কৃতি, খেলাধূলা ও বিনোদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে ছাত্র—ছাত্রীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ কলেজের সুনামকে ত্বরান্বিত করে।

2023-09-17-14-55-56b882f3e0ef81afa8437d2fcd42c7f1.docx 2023-09-17-14-55-56b882f3e0ef81afa8437d2fcd42c7f1.docx